বেন্থামের উপযোগবাদ কি? এর বৈশিষ্ট্যসমূহ আলােচনা কর
বেন্থামের উপযোগবাদ কি? এর বৈশিষ্ট্যসমূহ আলােচনা কর
অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক বেন্থাম মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদ থেকে তার সর্ববাদী সুখবাদ বা উপযােগবানের কথা প্রচার করেছেন। মানব প্রেষণার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ থেকে তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌছেন যে, সুখের অন্বেষণ ও দুঃখকে পরিহার করাই মানব প্রকৃতির একমাত্র উদ্দেশ্য। সুখের সন্ধান ও সুখকে পরিহার করাই মানব প্রকৃতির একমাত্র উদ্দেশ্য।
বেন্থামের উপযােগবাদ
অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক বেন্থাম মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদ থেকে তার সর্ববাদী সুখবাদ বা উপযােগবাদের কথা বলেছেন। মানব প্রেষণার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ থেকে তিনি এই
সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, সুখের অন্বেষণ ও দুঃখকে পরিহার করাই মানব প্রকৃতির একমাত্র উদ্দেশ্য। সুখের সন্ধান ও দুঃখকে পরিহার করাই মানব প্রকৃতির একমাত্র উদ্দেশ্য। এই সিদ্ধান্ত থেকে তিনি কতকগুলাে নিয়ন্ত্রণের সাহায্যে আত্মসুখ থেকে পুরুসুখের কথা প্রচার করেছেন। তিনি চার প্রকার নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন; যেগুলো সাহায্যে মানুষ তার নিজের সুখ ও স্বার্থ বর্জন করে সমাজের সর্বসাধারণের সুখ বা মঙ্গল চিন্তা করতে বাধ্য করে।সে নিয়ন্ত্রণগুলাে হলাে-১. সামাজিক ২. রাষ্ট্রীয়, ৩. প্রাকৃতিক,৪.ধর্মীয়। বেন্থাম সুখের কোনাে গুণগত পার্থক্যের কথা স্বীকার না করে কেবল পরিমাণগত পার্থক্যের কথা স্বীকার করেন বলে তার মতবাদকে সর্ববাদী সুখবাদ বলা হয়ে থাকে।
বেন্থামের উপযােগবাদের বৈশিষ্ট্যঃ
উপযােগবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে দেওয়া হলাে :
১. পরিমাণগত পার্থক্য : বেন্থাম সুখের কোনাে গুণগত
পার্থক্যের কথা স্বীকার না করে কেবল পরিমাণগত পার্ধক্যের কথা স্বীকার করেন বলে তার মতবাদকে স্থূল বা অমার্জিত পরার্থবাদী বা সৰ্ববাদী সুখবাদ বলা হয়ে থাকে। তিনি সুখের পরিমাণের সাহায্যে সুখের মূল্য বিচার করার চেষ্টা করেছেন।
২. সৰ্ববাদী সুখবাদ : সর্বাধিক সংখ্যক লােকের জন্য
সর্বাধিক পরিমাণ সুখের নিশ্চয়তা প্রদান করার জন্য একটা নৈতিক নিয়ম বের করাই বেন্থামের সর্ববাদী সুখবাদ বা উপযোগবাদের প্রধান উদ্দেশ্য বেন্থাম সুখের বিস্তৃতির উপর বিশেষ গুরুত্বারােপ করে বলেন যে, যে কাজ সর্বসাধারণের সুখ উৎপাদনে ব্রত সে কাজ ভালাে বা ন্যায়; এবং যে কাজ সুখ উৎপাদনে উপযােগী না সে কাজ মন্দ ।
৩. সুখবাদী গুণনীয়ক : বেন্থাম মনে করেন যে, সুখ বা
দুঃখের মধ্যে কোনাে গুণগত পার্থক্য নেই, বরং সুখ বা দুঃখের মধ্যে যে পার্থক্য তা হচ্ছে পরিমাণগত। তার মতে, সুখের পরিমাণের দ্বারা সুখের মূল্য বিচার করা যায়। তিনি এ ধরনের মত পোষণ করে বলেন যে, যদি দু’টি অনুভূতির একই পরিমাণ সুখ থাকে, তাহলে এ দু’টি অনুভূতির ব্যাপারে অন্য যে কোনাে ধরনের পার্থক্যই থাকুন না কেন, এ দু’টি অনুভূতির সুখের দিক থেকে একই ধরনের বা সমতুল্য।
৪. সুখের পরিমাণ : বেন্থামের নৈতিক মতবাদ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, তিনি সুখের গুণগত নিকের পরিবর্তে পরিমাণগত নিকের উপর বিষে ভাবে গুরুত্ব আরােপ করেন। তিনি সুখের মধ্যে ভিতর নয়, বরং পরিমাণগত দিক থেকে ভিন্নতর।
সমালোচনা
বেন্থামের উপযোগবাদের বিরুদ্ধে যে কয়টি ত্রুটি-বিচ্যুতি লক্ষ্য করেছেন সেগুলাে হলাে :
প্রথমত, বেন্থামের সসর্ববাদী সুখবাদ বা উপযোগবাদের ভিত্তি মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদ হওয়ার ফলে মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদের ত্রুটিসমূহ বেন্থামের মতবাদকে ও বর্তমান।উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করেঅনুপপত্তি’-তে জড়িত, অর্থাৎ এ মতবাদে অশ্বের সম্মুখে এত রাখির মতাে দেহে সে যুক্ত।
দ্বিতীয়ত, আত্নবাদী সুখবাদ থেকে পরার্থবাদী সুখবাদে উত্তরণের ক্ষেত্রে বেন্থাম যে বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণের সাহায্য নেন, তা যুক্তিসম্মত নয়, কেননা নৈতিক দায়িত্ববােধ বা বাধ্যতাবোধ বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় না, বরং তা আসে ব্যক্তির অন্তর বা ভিতর থেকে।
তৃতীয়ত, বেন্থাম পরিমাণগত পার্থক্যের প্রেক্ষিতে সুখের যে বিচারের কথা বলেছেন তাও সন্তোষজনক নয়। দু এক প্রকার অনুভূতি। এই অনুভূতি ব্যক্তিগত ব্যাপার এবং পরিবর্তনশীল বলে তার পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
চতুর্থত, বেন্থাম সুখের কেবল পরিমাণগত পার্থক্যের কথা বলে মানসিক বা মার্জিত সুখের পরিবর্তে দেহজ বা অমার্জিত সুখের কথা বলেন । বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ দেহজ বা অমার্জিত সুখের পরিবর্তে বরং মানসিক বা মার্জিত সুখকেই কামনা করেন।
তাছাড়া বেন্থাম ভবিষ্যতের সুখের পরিবর্তে বর্তমান সুখের উপর যে গুরুত্ব আরােপ করেন তা যুক্তিসম্মত নয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, বেন্থামের পরার্থবাদী সুখবাদ বা উপযােগবাদে নানা ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও এ আত্মসুখবাদের পরিবর্তে পরার্থবাদী সুখবাদের কথা বলে মানব সভ্যতার ক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছে, তার মুল্যকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।