প্রতিবেদন লেখার নিয়ম – পরীক্ষা কিংবা সাংবাধিকতায়
প্রতিবেদন লিখার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের বেশ কয়েকটি জিনিস সম্পর্কে পূর্বে জানা উচিত। আর সেগুলো জেনেই আমরা প্রতিবেদন লিখার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানবো, হতে পারে সেটা অফিসিয়াল প্রতিবেদন লেখার নিয়ম কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার নিয়ম। প্রথমে আমাদের জানতে হবে প্রতিবেদন কি বা কাকে বলে সে সম্পর্কে।
প্রতিবেদন কাকে বলে?
সাধারণত প্রতিবেদন হলো কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা বস্তুকে কেন্দ্র করে সে সম্পর্কে সকল ধরনের প্রয়োজনীয় তথ্য ও অনুসন্ধান ভিত্তিক বিবরণী। কোনো নির্দিষ্ট একটি ঘটনা, বিষয়, ইস্যু সম্পর্কে জ্ঞানভিত্তিক ও সুচিন্তিত বক্তব্য প্রদান করাকেই প্রতিবেদন বলে। প্রতিবেদনের মাধ্যমে একটি ঘটনাকে আপনি খুব সংক্ষিপ্তেই বিবরণ করতে সক্ষম হবেন এবং তা সঠিক বর্ণনার মাধ্যমেই।
সুতরাং ইতিমধ্যে আমরা জেনে গেছি যে, প্রতিবেদন কাকে বলে। ছাত্রাবস্থায় থেকে চাকুরি কিংবা দৈনন্দিন অনেক কাজকর্মে প্রতিবেদন এর ব্যবহার লক্ষণীয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্র রয়েছে, যেগুলোতে নিয়মিত প্রতিবেদন এর ব্যবহার লক্ষণীয়। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো নিউজ কিংবা সংবাদে। যাইহোক, বিলম্বিত না করে তাহলে চলুন জানা যাক, প্রতিবেদন লেখার নিয়ম সম্পর্কে। ( বাংলা রচনা সম্পর্কে জানুন এবং আবেদনপত্র লিখার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানুন )
প্রতিবেদন লেখার সঠিক নিয়ম
যেহেতু আমরা জানি যে, যেকোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা বস্তুকে কেন্দ্র করেই প্রতিবেদন তৈরি হয়, তাই যদি আমরা কোনো একটি প্রতিবেদন লিখতে চাই, তাহলে সে বিষয় কিংবা বস্তুকে ৩টি ভাগে ভাগ করে নিতে পারি। সেই ৩টি পার্ট কি? তিনটি ভাগ হলো-
- প্রতিবেদনের প্রারম্ভিক অংশ
- প্রতিবেদনের প্রদান অংশ
- প্রতিবেদনের পরিশিষ্ট
এখানে প্রতিবেদনের প্রারম্ভিক অংশে থাকে লেখাকৃত প্রতিবেতনের শিরোনাম এবং একইসাথে প্রাপকের নাম, ঠিকানা, সুত্র ও বিষয়ের সংক্ষিপ্ত সার নির্দেশক কথা।
ঠিক একইভাবে প্রতিবেদনে প্রদান অংশে থাকে সেই ঘটনাকৃত বিষয় সম্পর্কে ভুমিকা, মুল প্রতিবেদন, উপসংহার ও সুপারিশ।
আর সর্বশেষ প্রতিবেদনের পরিশিষ্টে থাকে তথ্য নির্দেশ, গ্রন্থ বিবরণী, কমিটির তালিকা ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি।
উপরের এতোকিছু আলোচনার পর নিশ্চয়ই একটি প্রশ্ন এখন আসতে পারে, আর সেটি হলো প্রতিবেদন কিভাবে লিখবো? এতোক্ষণ আমরা প্রতিবেদন সম্পর্কে সার-সংক্ষেপ জানলাম এবং প্রতিবেদনের আনুসাঙ্গিক তথ্যগুলো সম্পর্কে অবগত হলাম। এবার একটি উদাহরণের মাধ্যমে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
প্রতিবেদন লেখার স্টেপ বা ধাপগুলো সংক্ষেপে
প্রতিবেদনের শিরোনাম > প্রতিবেদনের স্থান > প্রতিবেদনের তারিখ > বর্ণনা > সুপারিশ সমূহ > প্রতিবেদক
প্রতিবেদনের শিরোনাম: যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আপনি প্রতিবেদনটি লিখতে চাচ্ছেন, সে ঘটনা রিলেটেড বা সম্পর্কিত একটি আকর্ষণীয় এবং সুন্দর শিরোনাম দিবেন।
প্রতিবেদনের স্থান: আমরা জানি, এই পৃথিবীতে যে কোনো যদি একটি ঘটনা ঘটে, তাহলে অবশ্যই সেটি কোনো একটি স্থানে ঘটে থাকে, আর এই জায়গায় সেই ঘটনাকৃত স্থানের নামটি হবে।
প্রতিবেদনের তারিখ: সেই ঘটনাটি ঘটার সময়কে মূলত এখানে ইন্ডিকেট করা হচ্ছে। যেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবেদনটি লেখা হচ্ছে, সে ঘটনা ঘটার তারিখটি এখানে বসাবেন।
বর্ণনা: এটি হলো প্রতিবেদনের মূল অংশ। এখানে আপনি সম্পূর্ণভাবে এবং সঠিক ও সাবলীল ভাবে পুরো বা সম্পূর্ণ ঘটনাটি বর্ণনা করবেন। অবশ্যই বর্ণানা করতে হবে সাবলীল ভাবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে ভাষাগত সার্বিক দিক দিয়ে। ঘটে যাওয়া ঘটনাটি চমৎকার ভাবে বর্ণনা করতে পারলে, প্রতিবেদনটি সার্থক হয়ে উঠবে।
সুপারিশ সমূহ: এই স্থানে বিশেষ করে এই সুপারিশ সংযোজন বা অ্যাড করবেন।
প্রতিবেদক: মূলত যারা নির্দিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে উক্ত প্রতিবেদনটি লেখছে বা লিখছে, এই স্থানে তাদের নাম এবং ঠিকনা বসবে। হতে পারে তা একজন কিংবা একাধিক জন।
প্রতিবেদন লেখার কয়েকটি নমুনচিত্র
প্রতিবেদন কত প্রকার অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতিবেদন লেখা হয়?
সাধারণত ক্ষেত্র ও বিষয় ভেদে প্রতিবেদনকে বিভিন্ন শ্রেণীতে নাম করণ করা হয়। এর সঠিক কোনো নির্দিষ্ট প্রকারভেদ নেই। কিন্তু আলোচনার সাপেক্ষে বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে আমরা প্রতিবেদন পড়ে থাকি। আর সেগুলো হলো-
নির্দিষ্ট কোনো একটি বিষয়, ঘটনা ও চরিত্র কে কেন্দ্র করে প্রতিবেদন বিভিন্ন রকমের হতে পারে । আর সেগুলোর মধ্যে বেশ কিছু হলো-
- ঘটনা বা দুর্ঘটনা জনিত প্রতিবেদন
- তদন্ত ভিত্তিক প্রতিবেদন
- খেলাধুলা, বিজ্ঞান প্রযুক্তি , পরিবেশ বিষয়ক প্রতিবেদন
- সাক্ষাৎকার ভিত্তিক প্রতিবেদন
- রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিষয়ক প্রতিবেদন
- সম্পাদকীয় প্রতিবেদন ইত্যাদি
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম নিয়ে শেষ কথা
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম সম্পর্কে শেষ কথা হিসেবে তেমন কিছু বলার নেই। তবুও কিছু জিনিসকে টাচ করে যেতেই হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় স্কুল-বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং পরীক্ষার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিবেদনকে শিখানো হয়। তবে বাস্তবিক জীবনেও প্রতিবেদনের গুরুত্ব অপরিসীম। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি দ্ধারা সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থী সহ চাকুরিজীবীগণও বিশেষ ভাবে উপকৃত হতে পারবে। সুতরাং যদি এমন কেউ থেকে থাকে, যে এখন অবধি প্রতিবেদন লেখার সঠিক নিয়ম কিংবা কিভাবে লিখতে হয়, তা সম্পর্কে না জেনে থাকে, তাহলে দয়া করে পুনরায় প্রথম হতে লাস্ট বা শেষ অবধি আরেকবার প্রতিবেদন লেখার নিয়ম সম্পর্কিত আর্টিকেলটি পড়ুন। আশা করি উপকৃত হতে পারবেন।