সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ম
সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ম কিন্তু ফরজ নামাজ পড়ার নিয়মের ন্যায়। নামাজ হলো প্রতিটি মুসলিম মুমিন ব্যক্তির জন্য বাধ্যতামূলক একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যদি কোনো ব্যক্তি কোনো রকম গুরুত্বপূর্ণ ওযর ছাড়া সুন্নত নামাজ তরক করে, তাহলে সে ব্যক্তি অবশ্যই গুনহাগার হবে। ( ইসলামিক কার্যকারী ছোট কিছু দোয়া ও হাসবুনাল্লাহু এর ফজিলত সম্পর্কে জানুন )
তবে যদি কোনো মুমিন ব্যক্তি সফর করে থাকে এবং সেই মূহর্তে নামাজের সময় হয়, তখন সেই সফরকারী ব্যক্তির জন্য সুন্নত নামাজের বিশেষ নিয়ম রয়েছে। তাই সফর ব্যতীত পৃথিবীতে বসবাসকারী সকল মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য সুন্নত নামাজ পড়া অত্যাবশ্যক। অবশ্যই তাকে নিয়মিত সুন্নত নামাজ পড়তে হবে। ( রিজিক বৃদ্ধির দোয়া )
প্রিয় নবী হযরত সা: সফলকালীন সময়ে যোহর, মাগরিব ও এশার সুন্নত ছেড়ে দিতেন। তবে এখানে একটি দিক স্পষ্ট যে, তিনি সফরকালীন সময়েও কিন্তু ফজরের সুন্নাত এবং এশার নামাজের পর বিতরের নামাজ কখনোই ছেড়ে দিতেন না। যখন সফর করতেন, তখন উক্ত নামাজ অর্থাৎ ফজরের সুন্নত ও বিতরের নামাজ পড়তেন। আর আমাদের মানবদের জন্য হযরত সা: হলেন এক উত্তম আদর্শ এবং তাঁর উপর অন্য কোনো আদর্শকে লালন করার কোনো মুসলিমের দায়িত্ব নয়। বরং তার আদর্শকে আকড়ে ধরতে হবে আমাদেরকে। এই জন্যই মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআন শরীফে বলেন,
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
অর্থ: “নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের জীবনে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদশ।” (সূরা আল আহযাব, আয়াত :২১)
অর্থাৎ আমাদের জীবন সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে নবী সা: কে অনুসরণ করতে হবে। এবং কি তা সুন্নত নামাজের ক্ষেত্রে।
সুন্নত নামাজ কিভাবে আদায় করতে হয়?
সাধারণত অন্য সকল ফরজ নামাজ যেভাবে পড়ে, ঠিক একইভাবে সুন্নত নামাজও পড়তে হয়। তারপরও পাঠকদের দিকটি বিবেচনা করে নিম্নে সুন্নত নামাজ নিয়ে ডিজেইলস আলোচনা করা হয়েছে।
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা: বলেন,
صَلُّوا كَما رَأَيْتُمُوني أُصَلِّي
অর্থ: “তোমরা আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখেছ ঠিক সেভাবে নামায পড়”। (বুখারী) আল্লাহই তাওফিক দাতা।
একজন মুসলিম হিসেবে এখানে পাঠকদের অধিকাংশেই জানে যে, কখন কখন সুন্নত নামাজ পড়তে হয়। আযানের পর দোয়ার ফজিলত সহ পাঠকদের সুবিধার্থে, তারপরও চলুন জেনে নেওয়া যাক কখন কখন সুন্নত নামাজ পড়তে হয় এবং তা কত রাকাত করে। সুন্নত নামাজের রাকাত ও সময়-
- দিনের শুরুতে অর্থাৎ ফজর নামাজের ফরযের পূর্বে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
- ঠিক একইভাবে জোহর নামাজের ফরযের আগে চার রাকাত ও ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা ও সুন্নত।
- প্রতি শুক্রবার অর্থাৎ জুমার নামাজের ফরযের আগে চার রাকাত ও ফরযের পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
- দিনের শেষ ভাগে অর্থাৎ মাগরিব নামাজের ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
- দিনের শেষ নামাজ অর্থাৎ এশার নামাজের ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
মূলত উপরোক্ত পয়েন্ট আকারে যে নামাজগুলোকে ইন্ডিকেট করা হয়েছে, সেগুলো হলো সুন্নাত নামাজ এবং প্রতিটি মুসলিমের উচিত উক্ত সুন্নত নামাজগুলো নিয়মিত সময় করে আদায় করা। অন্যথায় সে বান্দা গুনহাগার হবে।
কেননা উপরে উল্লেখিত এই সকল নামাজকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলা হয়। সুন্নাতে মুয়াক্কাদা যদি কোনো মুসলিম জেনে শুনে এবং কোনো রকম কারণ ছাড়া ত্যাগ করে, তাহলে সে ব্যক্তি গুনাহাগার হবে এবং এই জন্য তাকে জবাবদেহিতা করতে হবে।
আর সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ম হিসেবে প্রত্যেক ফরজ নামাজের ন্যায় সুন্নত নামাজ। আর একইভাবে পড়তে হবে। প্রথমে হাত বেঁধে নামাজে দাড়িয়ে প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ে তারপর অন্য সূরা বাঁধতে হবে। এবং এরপর অন্য সকল নিয়ম কানুন ফরজ নামাজের ন্যায়। আর যদি সুন্নত নামাজ সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা ও নফল হয় এবং চার রাকাত বিশিষ্ট হয় , তাহলে দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহ্হুদের পরে দুরুদ শরীফ ও দু‘আয়ে মাছুরা পড়াও উত্তম । মূলত এটাই হলো সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ম।
সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ম নিয়ে শেষ কথা
সুন্নত নামাজকেও আমাদের ফরজ নামাজের ন্যায় গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় বান্দা গুনাগার হবে। মূলত আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা: যে সকল নামাজ আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ ব্যতিত নিজ থেকে পড়তেন, তাকেই আমরা সুন্নত নামাজ বলে থাকি। আর সুন্নত নামাজের মধ্যে সুন্নতে মুয়াক্কাদা হলো সুন্নত নামাজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নামাজ। যদি কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে সন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজ তরফ করে, তাহলে সে গুনাগার হবে। তাই অবশ্যই আমাদেরকে সুন্নত নামাজের প্রতি আরো সজাগ থাকতে হবে। কোনো ভাবেই কোনো রকম গুরুত্বপূর্ণ অযুহাত ছাড়া সুন্নত নামাজ ছাড়া যাবেন না।