হাসবুনাল্লাহু এর বিষ্ময়কর ফজিলত সম্পর্কে জেনে একজন মুসলমান বিভিন্ন রকম বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পেতে পারে। আমরা মানুষেরা প্রতিনিয়ত নানা রকম বিপদে পড়ি। আর এই সকল বিপদ আপদ থেকে একমাত্র মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে রক্ষা করতে পারেন। আর তাই আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে সকল ধরনের বিপদ থেকে বেঁচে থাকতে উক্ত দোয়া অর্থাৎ হাসবুনাল্লাহু দোয়াটি দিয়েছেন। দুনিয়ার যাবতীয় ক্ষতি, আপদ-বিপদ থেকে মুক্ত থাকতে এবং বেঁচে থাকতে এবং তাঁর যাবতীয় পরীক্ষায় পাস করতে পবিত্র কুরআনের দুটি আয়াতাংশের সমন্বয়ে একটি উত্তম তাসবিহ তথা দোয়া রয়েছে। যা সফলতা লাভে অত্যন্ত কার্যকরী। আর তাকেই আমরা মূলত হাসবুনাল্লাহু বলে থাকি। তাহলে এখন প্রশ্ন আসতে পারে হাসবুনাল্লাহু দোয়াটি কি? আসুল তাহলে মূল আলোচনায় প্রবেশের পূর্বে হাসবুনাল্লাহু দোয়াটি সম্পর্কে জেনে নেই। ( সাহাবীদের নামের তালিকা সহ নবীর স্ত্রী কেন ১১ জন ছিল, সে সম্পর্কে জানুন )
হাসবুনাল্লাহু দোয়া
মহান আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পেতে পবিত্র কোরআনের সূরা আল-ইমরানের ১৭৩ নাম্বার আয়াতে হাসবুনাল্লাহু দোয়াটিকে দিয়েছেন। তাহলে কি সে আমল অথবা দোয়া? চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক। হাসবুনাল্লাহু দোয়াটি হলো-
” حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ “
উচ্চারণ: ” হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল। ”
অর্থ: ” আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম সাহায্যকারী, কার্যসম্পাদনকারী “
মূলত উপরের দোয়াটিই হলো হাসবুনাল্লাহু দোয়া। আর আজকের আলোচনা অর্থাৎ হাসবুনাল্লাহু এর বিষ্ময়কর ফজিলত সম্পর্কিত সমস্ত কিছুই থাকবে উক্ত আয়াত অথবা দোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। তাহলে আলোচনা দীর্ঘায়িত না করে, চলুন তাহলে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। ( সকল নবীদের নাম জানার পাশাপাশি মহিলা সাহাবীদের নাম সম্পর্কেও অবগত হোন )
হাসবুনাল্লাহু এর বিষ্ময়কর ফজিলত ও আমল
হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল
‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকীল’-অংশটি পবিত্র ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে আগুনে নিক্ষেপ করা হলো এবং রাসূল (ছাঃ) (মুশরিকদের হামলা হবে এমন খবর শুনে হামরাউল আসাদে) উক্ত দো‘আটি পাঠ করেন (বুখারী হা/৪৫৬৩; আলে ইমরান ৩/১৭৩)। অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) এই বিশেষ দোয়াটি পাঠ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন (তিরমিযী হা/৩২৪৩; ছহীহাহ হা/১০৭৯)। তবে ‘নি’মাল মাওলা ওয়া নি’মান নাছীর’ বাক্যটি আল্লাহর প্রশংসাসূচক কুরআনের আয়াত (আনফাল ৪০; হজ্জ ৭৮), যা কোন দোয়ার সাথে যুক্ত করে পাঠ করায় কোন বাধা নেই। যেকোন দুঃখ, কষ্ট, বিপদ, দুশ্চিন্তায় আল্লাহর উপরে পূর্ণ তাওয়াক্কুল প্রকাশের জন্য এখানে উল্লেখিত উপরোক্ত ইসলামিক দোয়া পাঠ করা যায় আর তাঁর ফজিলতও পাওয়া যায়।
হাসবুনাল্লাহ এর আমল সমূহ
নামাজের আগে ও পরে ১১ বার দুরূদ শরীফ পড়ে এই দু‘আটি পাঠ করা।
حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ
- ফিতনা ও বিপদ মুক্তির জন্য ৩৪১ বার।
- বিশেষ কোন মকছুদ পূরণের জন্য ১১১ বার।
- বিভিন্ন পেরেশানী দূর হওয়ার জন্য ১৪০ বার।
- রিযিকের প্রশস্ততা , অভাব অনটন দূর করা এবং করজ আদায়ের জন্য ৩০৮ বার।
মহান আল্লাহ তাআলা হলো সেই মহান সত্তা; তিনি যদি কাউকে বিপদ দিতে চান তাহলে তা রোধ করার মতো কোনো শক্তি কারো কাছেই নেই। আবার যদি কাউকে তিনি কল্যাণ দিতে চান তাতেও বাধা দেয়ার সাধ্যও কারো নেই। তাই আমাদেরকে আল্লাহ ত’আলার পরীক্ষায় যথাযথভাবে উত্তীর্ণ হতে এবং তাঁর সাহায্য লাভে এ দোয়াটিই সর্বোত্তম। সুতরাং বিপদ-আপদ-মুসিবতে আল্লাহর শেখানো শব্দমালা দ্বারাই তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করা উত্তম এবং উচিত। যেহেতু মহান আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে তাঁরই তাসবিহ-তাহলিল ও তাওবা-ইসতেগফারের বিকল্প নেই।
হাসবুনাল্লাহু এর বিষ্ময়কর ফজিলত শেষ কথা
মহান আল্লাহ তা’আলা হলেন আমাদের রব। আর তিনিই আমাদেরকে সকল প্রকার বিপদ আপদ দিয়ে পরীক্ষা করে নেয়। তিনিই বিপদ-আপদ, ক্ষয়, ক্ষুধা, ভয়, সন্তান-সন্তুষ্টি, জায়গা, ধন-সম্পদ, জীবিকা, উপার্জন ইত্যাদি দিয়ে পরীক্ষা করে থাকে। আর এর থেকে বাচাঁর জন্য আমাদেরকে তাওয়াক্কুল করে আল্লাহর নিকট হতে সাহায্য চাইতে হবে। যা উপরের আয়াতের মাধ্যমেও চাওয়া সম্ভব। এ সব কঠিন পরীক্ষায় পাস করতে হলে আল্লাহ তাআলার দেওয়া তাসবিহ ও নবি-রাসুলদের শেখানো আমল করার বিকল্প অন্য কিছু নেই। তাই পরিশেষে বলা চলে হাসবুনাল্লাহু এর বিষ্ময়কর ফজিলত দ্ধারা যেকেউ মুমিন ব্যক্তি ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারে। সুতরাং, আমাদের মুসলিম উম্মাদের সকলকেই যেন, নিয়মিত আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে হাসবুনাল্লাহু দুরুদটি পড়তে পারি, সে তৌফিক দান করুক, আমিন।