Health

ফুসফুস ভালো রাখার উপায় | ৪টি ফুসফুসের রোগ ও প্রতিকার

ফুসফুস ভালো রাখার উপায়

বর্তমান বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাবসহ চলমান পরিবেশ দূষণে আমাদের ফুসফুস ভালো রাখার উপায় এবং এগুলো থেকে কীভাবে উত্তরণ পাবো সে সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা সচেতন ব্যক্তি হিসেবে সবারই কর্তব্য। আমাদের মানব শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে ফুসফুস হলো অন্যতম। প্রতিনিয়ত শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে যথাক্রমে অক্সিজেন নেওয়া এবং নির্গত করার ক্ষেত্রে ফুসফুসের ভূমিকা না বললেই নয়। ফুসফুস ব্যতিত উক্ত দেহের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম অসম্ভব। মূলত জীবন বাঁচানোর তাগিদে ফুসফুস সুস্থ্য রাখা এবং এর যত্ন নেওয়া প্রত্যেক মানবেরই উচিত এবং তা বাধ্যতামূলক। ( স্মার্ট হওয়ার উপায় জানুন )

আমাদের জীবন-যাপনের বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ উভয় দিকটিতেই ফুসফুসের ভূমিকা আছে এবং তা পরোক্ষভাবে এবং প্রত্যেক্ষ উভয়ভাবেই। আমাদের মাঝে অনেকে আছে যারা ফুসফুস ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে দ্বি-স্তর জ্ঞান রাখে না। গ্রাম্য এবং শহুরে অনেকে আছে যারা ফুসফুসের সুস্থ্যতার বিষয়টিকে ইগনোর করে চলে। প্রতিনিয়ত ধূমপান, দূষিত পরিবেশ, বিভিন্ন রকম ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, জীবানু, অনুজীব, আঘাত, ব্যাথা, অতিরিক্ত হাছি-কাঁশি ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের অতি মূল্যবান ফুসফুসটি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। ( হার্ট ব্লক দূর করুন )

আমাদের দেহের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি সুস্থ্য রাখার জন্য ফুসফুস ভালো রাখার ব্যায়াম নামে নির্দিষ্ট কিছু ফুসফুসের এক্সারসাইজ রয়েছে। এই ব্যায়ামগুলো ফুসফুসের রোগ নিরাময়ে যেমন ফুসফুসের ক্যান্সার অথবা বিভিন্ন ফুসফুস রোগের লক্ষণ নিরাময়ে সহায়তা করে। মূলত আজকের আর্টিকেলে আমরা ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে জানার চেষ্টা করবো।

ফুসফুস ভালো রাখার উপায় জানার আগে সর্বপ্রথম জানা যাক ফুসফুসের সমস্যা গুলো সম্পর্কে এবং এই সমস্যাগুলো হওয়ার কারণ কী বা কেন হয় তার সম্পর্কে সংক্ষিপ্তে একটা ধারণা নেওয়া যাক।

ফুসফুসের সমস্যাগুলো

ফুসফুসের সমস্যাগুলো
  • ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস
  • এসফাইসিমা
  • ক্রনিক অ্যাজমা
  • হেপাটাইসিস

ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস

ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস হলো মূলত আমাদের শ্বাসনালির ভেতরে অবস্থিত গ্র্যান্ডগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ফুলে যাওয়া। শ্বাসতন্ত্রের গ্র্যান্ড বা গ্রন্থিগুলোর প্রধান কাজ হলো নিয়ন্ত্রিতভাবে কফ তৈরি করা। কিন্তু যখনই ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসে কেউ আক্রান্ত হয়, তখন এই গ্রন্থিগুলো অস্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় এবং অতিরিক্ত পরিমাণ শ্লেষ্মা বা কফ তৈরি হয়।

ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস হওয়ার প্রধান কারণ হলো ধূলাবালি আমাদের শ্বাসনালিতে প্রবেশ করা এবং দূষিত পরিবেশের দূষিত ধোঁয়া দ্ধারা আক্রান্ত হওয়া। দূষিত ধোঁয়া এবং ধূলাবালির কারণে আমাদের শ্বাসতন্ত্রে ইনফেকসন হয়, ফলাফর সরূপ ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস রোগে আক্রান্ত হওয়া।

এসফাইসিমা

এসফাইসিমা হলো সাধারণত ফুসফুসের একটি শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ। এটি এক ধরনের ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিব পালমোনারি ডিজিজ। এসফাইসিমা রোগটি মূলত ফুসফুসের পাতলা টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্থ করে।

এসফাইসিমা ফলে একজন ব্যক্তি অতিরিক্ত শ্বাসকষ্টে ভোগে এবং তার দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে এসফাইসিমা রোগটি বিঘ্নতা ঘটায়। এই ফুসফুসীয় রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ঠিক মতো তার প্রয়োজনীয় সকল কাজকর্ম করতে পারে না এবং খেলাধুলাও করতে পারে না।

ক্রনিক অ্যাজমা

ক্রনিক অ্যাজমা মূলত শ্বাসকষ্ট জনিত একটি রোগ। অ্যাজমা বা হাঁপানি বহুল প্রচলিত একটি রোগ হলেও এর চূড়ান্ত রূপ মৃত্যু হয়ে থাকে। যখন ক্রনিক অ্যাজমা হয়, তখন ফুসফুসের আস্তরণ সংকীর্ণ হয়ে যায়। তখন শ্বাসনালি এতোটাই সংকীর্ণ হয়ে যায় যে, শ্বাস-প্রশ্বাসে বায়ুগতি অনেকটা কমে যায়। ফলে শ্বাসকষ্ট তৈরি হয়।

ক্রনিক অ্যাজমা মূলত বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কয়েকটি কারণ হলো অল্প বয়সে বুকে ব্যথা পাওয়া, বংশগত/জিনগত সমস্যা থাকা ইত্যাদির কারণে ক্রনিক অ্যাজমা হয়ে থাকে।

হেপাটাইসিস

হেপাটাইসিস রোগ হলো মূলত যকৃত এবং লিভারের প্রদাহ জাতীয় সমস্যা বা অসুখ। যখন আমাদের লিভার ভাইরাস জনিত কারণে সংক্রমণ ঘটে তখন হেপাটাইসিস হয়। বিজ্ঞানীরা এর জন্য মোট ৫টি জাতীয় ভাইরাসকে হেপাটাইসিসের কারণ হিসেবে ইনডিকেট করেছে।

এর ফলে লিভারে প্রচন্ড ঝাঝালো ব্যাথা এবং প্রদাহ সৃষ্টি হয়। যাকে তুষের আগুন নামেও অভিহিত করা হয়েছে। অল্প কিংবা বেশি যেকোনো বয়সের ব্যক্তিই এই ভাইরাস দ্ধারা সংক্রমিত হতে পারে।

ফুসফুস ভালো রাখার ২টি উপায়

ফুসফুস ভালো রাখার ২টি উপায়

মূলত ফুসফুস ভালো রাখতে আমাদের হিউজ পরিমাণ কিছু করতে হবে না। প্রতিদিন কিছু অভ্যাস গড়ে তুললে এবং কিছু উপায় ফুসফুসের ব্যায়াম অ্যাপ্লাইয়ের মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকেই ফুসফুসকে ভালো রাখতে পারি। অথবা যখনই আমাদের  ফুসফুস রোগের লক্ষণ দেখা দিবে, তখন নির্দিষ্ট কিছু কাজ করলে ফুসফুসের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারি। আলোচনার সুবিধার্থে ফুসফুস ভালো রাখার উপায় কে দুই ভাগে ভাগ করি। তবে এই দুইটি পদ্ধতিই শেষ নয়। ফুসফুস ভালো রাখতে আরো অনেক উপায় আছে এবং-কি বাজারে সহজ লভ্য এমন অনেক ঔষধও আছে। কিন্তু আজকের পর্বে আমরা এমন কিছু নিয়ে আলোচনা করবো না, যেগুলো আমাদের জন্য অত্যন্তু ব্যায়বহুল এবং কষ্টসাধ্য। ফুসফুস ভালো রাখার উপায় হিসেবে সবচেয়ে সহজ ২টি উপায় নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো মেনে চলার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি খুব সহজেই তার ফুসফুসের যত্ন নিতে পারবে।

ফুসফুস ভালো রাখার উপায় ২ টি –

  • ফুসফুস ভালো রাখার খাদ্য
  • ফুসফুস ভালো রাখার ব্যায়াম

ফুসফুস ভালো রাখার খাদ্য

ফুসফুস ভালো রাখার খাদ্য

স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ফুসফুস রক্ষার্থে ফুসফুসের যত্ন নেওয়া অতিব জরুরী। এছাড়াও করোনা কালীন সময়ে তো ফুসফুসের যত্ন নেওয়া আরো প্রয়োজন। করোনাকালে এবং ফুসফুস ভালো রাখতে খাদ্য তালিকাতে সঠিক খাদ্য রাখতে হবে।

বিজ্ঞানীদের এবং পুস্টিবীদদের মতে আমাদের দৈনিক খাদ্য তালিকাতে সবুজ শাকসবজি রাখতে হবে। বিশেষ করে আলু, কুমড়া, পটল, লাল শাক, গাজর, সিম, লাউ ইত্যাদি জাতীয় শাক-সবজি প্রচুর পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করুণ। তবে সবজি কাটার সময় চেষ্টা করুন খোসা না ছড়াতে। খোসা না ছাড়িয়ে সবজি খেয়ে অভ্যাস করুণ। এতে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

সাধারণত, ফুসফুস ভালো রাখতে ২ ধরনের খাদ্য বেশি উপকার করে। পটাশিয়ামযুক্ত খাদ্য এবং অন্যটি হলো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য। পাশাপাশি টাটকা ফলমূল খেতে হবে।

পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্যগুলো হলো সবুজ শাক-সবজি। তাই সবুজ টমেটো, বিট, আলু, কলা ইত্যাদি খেতে পারেন। এগুলো ফুসফুসের জন্য সবচেয়ে ভালো পটাশিয়াম সমৃদ্ধ সবুজ শাক-সবজি।

আর প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যগুলোর মধ্যে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, দই, আলো, ছোলা ইত্যাদি খেতে পারেন। এগুলো খেলে আশা করা যায় প্রোটনের ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে।

করোনা কালীন সময়ে ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে পানির ভূমিকা অনিস্বীকার্য। দৈনিক ৩-৫ লিটার পানি পান করতে হবে।

এবার আসি টাটকা ফলমূল এর ব্যাপারে।

প্রতিদিন একটি বা আধটি আপেল খেতে পারেন। অথবা সপ্তাহে ৩-৪ টি আপেল খেতে পারেন। মনে রাখবেন, আপল ফলে আছে যথেষ্ট পরিমাণ ফ্লাবোনয়েড আর নিয়মিত আপেল খেলে ফুসফুসে অ্যাজমা হওয়ার সম্ভাবনা ৩২ ভাগ কমে যায়।

খেতে পারেন গাজর। যদিও গাজর একটি সবজি জাতীয়। তবে এই ক্ষেত্রে আমরা ফল হিসেবে বিবেচনা করতে পারি এবং ফলের ন্যায় খেতে পারি। গাজরে আছে প্রচুর পরিমাণে ব্যাটাক্যারোটিন এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। আর জেনে রাখা ভালো যে, ব্যাটাক্যারোটিন আমাদের শরীরে গিয়ে ভিটামিন-এ রূপান্তরিত হয়। যা আমাদের চোখ ও ফুসফুসের জ্ন্য খুবই উপকারী।

ফুসফুস ভালো রাখার উপায় হিসেবে অন্য খাদ্যগুলোও আমরা গ্রাহণ করতে পারি। এর মধ্যে আছে কপি বা গ্রিণ ট্রি। আরো আছে

 রসুন, ভিটামিন ডি, মশলা, গুড় বা মধু। ফুসফুস রক্ষার্থে মধুর উপকারিতা অনেক। অ্যাডোক্যাডো।

উপরের বর্ণিত খাদ্যগুলো মূলত ফুসফুস রক্ষার্থে এবং ফুসফুস ভালো রাখতে খাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই যখন ফুসফুসের কন্ডিসন খারাপ হবে, তখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আর উপরের উল্লেখিত খাবারগুলোই হলো ফুসফুস ভালো রাখার খাদ্য।

ফুসফুস ভালো রাখার ব্যায়াম

ফুসফুস ভালো রাখার ব্যায়াম

শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক স্বাভাবিকভাবে করার জন্য ফুসফুস ভালো রাখার বিকল্প কোনো কিছুই নেই। তবে আমরা চাইলেই নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম করার মাধ্যমেই আমরা ফুসফুস ভালো রাখতে পারি। আর এই ব্যায়ামগুলোকেই ফুসফুস ভালো রাখার ব্যায়াম বলে। অনেকগুলো ব্যায়াম আছে, এর মধ্যে কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করা যাক। যে ব্যায়ামগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে তার একটা সিরাল চার্ট দেখা যাক।

ফুসফুস ভালো রাখার ব্যায়াম

  • রিলাক্সিং ব্রিদিং এক্সারসাইজ
  • যোগব্যায়াম
  • বেলো ব্রিদিং এক্সারসাইজ
  • কার্ডিও এক্সারসাইজ
  • শুয়ে ব্যায়াম

উপরোক্ত এ ৫টি ব্যায়াম করোনাকালীন সময়ে এবং স্বাভাবিক সময়ে করতে পারেন। উপরোক্ত ফুসফুসের ব্যায়াম ফুসফসের মাসলগুলোকে শক্তিশালী করে। এছাড়াও ফুসফুসে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে উক্ত ব্যায়ামগুলো বেশ কার্যকরী।

ফুসফুস ভালো রাখতে উপরোক্ত সমস্ত কিছু যদি আমরা প্রতিনিয়ত করতে সক্ষম হই, তাহলে আশা করা যায়, খুব সহজেই আমরা আমাদের ফুসফুসকে রক্ষা করতে পারবো এবং ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারবো।

ফূসফুস ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে জানতে দেখুন

Sadia Afroz Niloy

Hey! I am Sadia Afroz Niloy! A student and passionate writer. I love to write blog and connect people Realtime. Send business proposal at [email protected]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button